একটি দূর্ঘটনা এবং কিছু স্বপ্নের অপমৃত্যু (১ম পর্ব)
একদিন শপিং করার জন্য বিগ বাজারের পাশে হাঁটছিলাম।
তখন দেখলাম দোকানের ক্যাশিয়ার ৫ অথবা ৬ বছরের
একটা ছোট বাচ্চার সাথে কথা বলছে।
ক্যাশিয়ারঃ আমি দুঃখিত। তোমার কাছে পুতুল কেনার জন্য
যথেষ্ট টাকা নেই।
ছোট্ট ছেলেটি আমার কাছে এল আর জিজ্ঞেস করল,
"আঙ্কেল, দেখেন তো, আমার কাছে কি সত্যিই যথেষ্ট
পরিমান টাকা নেই?"
আমি তার টাকাগুলো গুনে দেখলাম। আর পুতুলের দাম ও
দেখলাম। আসলেই তার থেকে সামান্য কম টাকা ছিল।
আমি বললাম, "সত্যিই তোমার কাছে পুতুল কেনার জন্য
যথেষ্ট পরিমাণ টাকা নেই।"
ছেলেটির মন খারাপ হল। তবুও সে ঐ পুতুলটি ২ হাত
দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখল।
আমি ওর কাছে গেলাম আর তারপর জিজ্ঞাসা করলাম,
"তুমি কাকে দেওয়ার জন্য পুতুলটি কিনতে চাও?"
ছেলেটি বলল, "এই পুতুলটি সবচেয়ে বেশি পছন্দ
করে আমার বোন। আমি ওর জন্মদিনে ওকে এটা গিফট
দিতে চেয়েছিলাম। আমার মায়ের কাছে পুতুলটি দিব
যাতে সে পুতুলটি আমার বোনের কাছে পৌঁছে দেয়।"
তার ২ টি বিষণ্ণ চোখ দেখে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
"তোমার বোন কোথায় গেছে?"
তখন সে মন খারাপ করে বলল, "আমার বোন আল্লাহর
কাছে চলে গেছে। আব্বু বলেছে, আম্মুও খুব
তাড়াতাড়ি সেখানে যাবে। তাই আমি ভাবলাম,
পুতুলটা আম্মুকে দিয়ে বোনের কাছে পাঠিয়ে দিব।"
আমার নিশ্বাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে এল।
ছেলেটি আবার বলতে লাগলো,
"আমি আব্বুকে বলে এসেছি যাতে আমি না ফেরা পর্যন্ত
আম্মুকে যেতে না দেয়।"
তারপর আমাকে একটা ফটো দেখিয়ে বলে, "আমার এই
ফটোটাও আম্মুকে দিয়ে দিব যাতে আমার বোন
আমাকে কখনো না ভুলে যায়।
আমি আমার আম্মুকে অনেক
ভালোবাসি। আম্মুকে যেতে দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু আব্বু বলেছে আমার বোনের দেখাশুনার জন্য
আম্মুকেও যেতে হবে।"
এসব বলতে বলতে নির্বাক ২ টি চোখে পুতুলটির
দিকে তাকিয়ে রইল।
তখন আমি তার টাকাগুলোর সাথে আরও কিছু টাকা যোগ
করি আর তাকে বলি, "চলো, আমরা টাকাগুলো আবার
গুনে দেখি। হয়তো এখানে পুতুল কেনার জন্য যথেষ্ট
টাকা আছে।"
গুনে দেখার পর ছেলেটি অনেক খুশি হয়। তখন
সে পুতুলটি কিনে নিয়ে চলে যায়। আমি আমার
শপিং গুলো শেষ করে বাসায় আসি।
এরপরে আমার ২দিন আগের লোকাল একটি নিউজপেপার
এর দিকে চোখ গেল, যেখানে একটা আর্টিকেল ছিল
যে একটি ট্রাক ড্রাইভার মাতাল হয়ে ট্রাক চালায় আর
একটি কারকে ধাক্কা দেয়।
ঘটনাস্থলে একটি ছোট
মেয়ে মারা যায় আর তার মা গুরুতর আহত হয়।
তাহলে কি শপিংমলে দেখা হওয়া ছেলেটি সেই পরিবারের
ছিল?
এরপরে আমি নিউজপেপার চেক করলাম আর দেখলাম ঐ
মহিলাটিও মারা যায়।
আমি নিজেকে থামাতে পারিনি তার ফেয়ারওয়েলে যেতে।
আমি একটি সাদা গোলাপ কিনলাম। গিয়ে দেখলাম
মহিলাটি কফিনের ভেতর ছিল। তার পাশে সেই পুতুলটা,
যেটা একটা ছোট ছেলে তার বোনকে দিবে বলে কিনেছিল
এবং মহিলাটির বুকের মাঝে সেই ছেলেটির ফটো।
আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না।
মা এবং বোনের জন্য ছেলেটির ভালোবাসা কল্পনার
থেকেও বেশি। এত ভালোবাসা একটা মাতাল কেড়ে নিল
সামান্য একটু সময়ে!!!
কিছু কথাঃ এটা একটা ইংরেজি গল্পের বাংলা অনুবাদ।
এমন কেন হয় এই পৃথিবীতে?
যে মানুষ অপরাধ
করে সে সাজা না পেয়ে অন্য মানুষদের তার অপরাধের
জন্য মূল্য দিতে হয়।
এমন কেন হয় যে একটা মাতাল
ড্রাইভার এর জন্য একটি অবুঝ বাচ্চা তার
সবচেয়ে আপনজনকে হারায়?
÷÷কেন এমন হয়???
এই কেন এর উত্তর হয়তো আমাদের কারো কাছে নেই।
হ্যাঁ, আমাদের কাছে এর প্রতিকার রয়েছে।
চলুন,
আমরা আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি, মাতাল
হয়ে আমরা গাড়ি চালাবনা।
আসুন, আমরা একটু সচেতন
হই।
কপিঃ Nazmul Huda
÷÷মেঘের রাজপুত্র ভাইয়ের এবাউট থেকে নেওয়া।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন